কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জে আলাদা চারটি মামলায় অজ্ঞান পার্টির ১৫ সদস্যকে আটক ও তিনটি ক্লুলেস হত্যা মামলাসহ মোট ৪টি মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আটককৃতরা হলো, আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির ১০ সদস্য বাদশা (৩৫), ওলি (৩৪), সুলতান (৫৮), সুমন কারাল (২৭), বিরিয়ানি সুমন (৩৫), শাহিন (২৮), আলামিন ওরফে অনিক (২৮), জামাল (৩০), মনির (২৭) আশরাফ (৪২)। এবং চোরাই অটো ক্রয় বিক্রয়কারী ৫জন আসামী গ্যারেজ বাদশা ( ২৮), জুয়েল (৩৯), ৩। বাচ্চু (৫৫), রাজু (৪১), ও সাইদুর (৩৮)।
তিনি জানান, অটো চোর চক্রের একটি সংঘবদ্ধ দল দীর্ঘদিন যাবত কেরানীগঞ্জ ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অটোচালকদের অচেতন করে তাদের রিক্সা ছিনতাই করে আসছিল। এক্ষেত্রে অনেক সময় ছিনতাইকারীরা চালককে হত্যা করে অটো রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যেত। এমনই চারটি ঘটনায় চক্রের ১৫ সদস্যকে আটক ও চারটি অটোরিকশা, ১৫ পাতা চেতনানাশক ট্যাবলেট (ক্লোনাজেপাম), ঘটনায় ব্যবহৃত একটি উদ্ধার করেছে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণন থানা পুলিশ।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার সাংবাদিক দের জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম এন্ড অপস আমিনুল ইসলাম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরাণীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দীন কবির এর নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ জামানসহ একটি চৌকস তদন্ত টিম সংঘবদ্ধ হয়ে অজ্ঞান পার্টিকে ধরার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করে সিসিটি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সাহা্য্যে তাদেরকে কেরানীগঞ্জ,মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরও জানান, চক্রটি চালককে এক জায়গার কথা বলে অন্যত্র নিয়ে সুকৌশলে আসামীদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের নিজস্ব একজন চা বিক্রেতা কাছে নিয়ে যেতো।
সুলতাম চাচা নামে সে চা বিক্রেতা খাবারের সাথে চেতনানাশক পদার্থ মিশ্রিত চা খায়িয়ে অজ্ঞান করে রিক্সা নিয়ে পালিয়ে যেতো। রিক্সা নেওয়ার ক্ষেত্রে চালকে হত্যা করতেও ধিধা করতো না চক্রের সদস্যরা। বাকি আসামীদের আটক করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বয়স্ক অটোচালক খোরশেদ আলম (৫৭)-কে সিরাজদীখানের নিমতলি থেকে শ্রীনগর যাবে বলে ভাড়া করে শ্রীনগর পেট্রোল পাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে পৌছে যাত্রীবেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা কৌশলে অটোচালক খোরশেদকে চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে শরবত খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যে অটোচালক খোরশেদ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে শ্রীনগর থেকে নিয়ে এসে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের টোলপ্লাজা সংলগ্ন রাস্তার পার্শ্বে ফেলে রেখে খোরশেদের অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল হতে ভিকটিম খোরশেদকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিম খোরশেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করলে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অটো ছিনতাইসহ হত্যা মামলা রুজু হয়।
একই বছরের ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বৃদ্ধ অটোচালক আলম বেপারী (৭০) অটো রিক্সা চালানোর জন্য কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন রামেরকান্দা যায়। সেখান থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বৃদ্ধ আলম বেপারীর অটো ভাড়া নিয়ে কোনাখোলা আসে। তারপর বৃদ্ধ অটোচালক আলম বেপারীকে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক কৌশলে চেতনানাশক ঔষধ মেশানো চা খাওয়ায়। তারপর কিছুক্ষনের মধ্যে বৃদ্ধ আলম বেপারী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন রাজাবাড়ী রোডের পার্শ্বে ফেলে দিয়ে তার অটো নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনতা বৃদ্ধ আলম বেপারীকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধ আলম বেপারীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম বৃদ্ধ আলম বেপারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইং ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরন করলে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অটো ছিনতাইসহ হত্যা মামলা রুজু হয়।
সর্বশেষ গত ২৬ জানুয়ারি বিকাল অনুমান ৪ ঘটিকায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ পায় যে, একজন লোক অচেতন অবস্থায় ঝিলমিলের মধ্যে পড়ে আছে। এ খবর পাওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল হতে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাতনামা লোকটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ৪ দিন কোমায় থেকে অজ্ঞাতনামা লোকটির জ্ঞান ফিরে আসলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তার নাম হাসান, সে একজন প্রতিবন্ধী এবং সে একজন অটোচালক। হাসান ঘটনার বিষয়ে জানায় যে, অজ্ঞাতনামা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে মিরপুর হতে মোহাম্মদপুর যাবে বলে ভাড়া করে কেরাণীগঞ্জে নিয়ে আসে এবং তাকে চেতনানাশক ঔষধ মেশানো কফি খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে দিয়ে তার অটো নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। সে এর আগে কোন দিন কেরাণীগঞ্জে আসেনি। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আরও একটি অটো চুরি মামলা রুজু হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামীদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ৪ টি মামলার ৪জন ভিকটিমের মধ্যে ৩জন মারা গেছে এবং ১জন প্রতিবন্ধী হাসান ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
সম্পাদকঃ ইমরান হোসেন ইমু
অফিসঃ মাহফুজা প্লাজা (২য় তলা), কদমতলী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০
মোবাইলঃ ০১৭৫৬৬২৯৩০৫, ০১৮১৯-৫০১১২৫
বার্তা বিভাগঃ ০১৭৫৬৬২৯৩০৫
ইমেইলঃ songbadsobsomoy2@gmail.com