রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
ইমরান হোসেন ইমু
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাল। একসময় খালটি কেরানীগঞ্জের মানুষের প্রাণ ছিল। অতীতে এই খালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত অনেক পরিবার। খালে চলাচল করত যাত্রীবাহী, মালবাহী বড় বড় নৌযান। এ খালটি এখন কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিগত বিএনপি-জোট সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খালটির। খালের বহু জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে তারা । নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন এবং মার্কেট। আগানগর ও শুভাঢ্যা এলাকার ব্যবসায়ীরা খালের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলে আশেপাশের এলাকাগুলোও করে তুলেছে বসবাসের অনুপযোগী । ময়লা-আবর্জনা জমায় ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ খালের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে । বাকি অংশটাও সরু হয়ে আসছে দিন দিন। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কয়েকবার আবর্জনা পরিষ্কার করিয়ে খালে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করা হলেও কিছুদিন পর আবার ময়লা-আবর্জনা জমে যায়। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দরকার কেরানীগঞ্জবাসীর । প্রয়োজন বিশুদ্ধ বাতাসের। তাই এ খালটি উদ্ধার করে এর রক্ষনাবেক্ষণ জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনী শুভাঢ্যা খালে বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে চর কালীগঞ্জ এলাকা থেকে গোলাম বাজার এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের উভয় পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। খালটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানকারীরা খালের উভয় পাশে ১৮৬টি ছোট বড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে এবং খালটি পূনরায় খনন করে সেখানে পানির নাব্যতা সৃষ্টি করে। এরপর খালটিতে পূণরায় দখল ও দূষণের কারণে ২০১২ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে কেরাণীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৫৪লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে শুভাঢ্যা খালটি খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু করে। তখন প্রায় মাস খানেক সময়ব্যাপী খালের খনন কাজ সম্পন্ন করে। তার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার দখল ও দূষণের ফলে খালটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।
এবার খাল রক্ষায় এগিয়ে আসেন স্থানীয় সাংসদ নসরুল হামিদ বিপিু । ২০১৪ সালে নসরুল হামিদ বিপু খালটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুন:খনন ও তীর সংরক্ষন কাজের উদ্বোধন করেন।
এর পরথেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটির দুই তীর সংরক্ষনের জন্য ব্লক নির্মান কাজ শুরু করে। ব্লক নির্মান কাজ শেষ হলে খালের দুই তীরে ব্লক ফেলে তীর সংরক্ষন কাজ শুরু হয়। খালটিকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে খালের ১.৩ কিলোমিটার এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুন:খনন ও তীর সংরক্ষনের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড। যার সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো )। তারা খালের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করার ফলে খালটিতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফিরে আসে। প্রবাহিত হতে থাকে বুড়িগঙ্গার পানি।
চলাচল করতে থাকে ডিঙ্গি নৌকাসহ ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা। খালের এ স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ধরে রাখতে খাল ব্যবহারকারিসহ আসপাশের এলাকার জনগনের মাঝে জনসচেতনতা ফিরিয়ে আনতে অবশেষে কেরানীগঞ্জের ঐহিত্যবাহী এ খালটি দখলমুক্তকরন, দুষনরোধ ও জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুড়িগঙ্গার সাথে খালের সংযোগস্থল থেকে শুভাঢ্যা উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় সৌাখিন নৌকা বাইচ
এবারও খালের এ অবস্থা বেশী দিন টেকসই হয়নি। পুনরায় দখলে দুষনে আবার লাইফ সার্পোটে চলে যায় খালটি। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন নসরুল হামিদ বিপু।
গত ৪ জুন সোমবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়েরর সচিব কবির বিন আনোয়ার, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান এবং স্বনামধন্য স্থপতি ইকবাল হাবিব-কে সাথে নিয়ে শুভাঢ্যা খাল পরিদর্শনে আসেন নসরুল হামিদ বিপু। পরিদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল মূলত খালটির বর্তমান অবস্থা দেখা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।