শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন
আওয়ামী লীগে বাড়ছে কাদা ছোড়াছুড়ি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক স্থানেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা রূপ নিচ্ছে ‘কাদা ছোড়াছুড়িতে’। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মনোনয়নপ্রত্যাশীরা একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করছেন। এতে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। কারণ সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই বর্তমান এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-লুটপাট এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে বিএনপি-জামায়াতকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ আনছেন।
মনোনয়ন প্রতিযোগিতার এ দ্বন্দ্ব বহুরূপী। কোথাও সত্যিকারের ত্যাগীরা নিজের অবস্থান ফেরাতে লড়ছেন, আবার কোথাও জোটের জন্য নিজের আসন বিলিয়ে দেয়া নেতা তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মাঠে অবস্থান না থাকার পরও কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া প্রার্থীকে কোণঠাসা করতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ হচ্ছেন। এছাড়া ২০১৪-এর নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা অনেককেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন সেখানকার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা।
এ অবস্থা শুধু তৃণমূলে নয়, ছড়িয়েছে কেন্দ্র পর্যন্ত। আর থানা-জেলা-মহানগরে তো নিত্যদিনের ঘটনা। তবে কেন্দ্রে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ততটা না থাকলেও মাঠপর্যায়ের প্রতিযোগীরা কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। তারা কেউ প্রকাশ্যেই এমপির বদনাম করছেন, কেউ সংবাদ সম্মেলন করছেন আবার কেউ কেউ দলীয় ফোরামে অভিযোগ তুলে ধরছেন। দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অন্য দলের নেতাদের অভিযোগে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করছেন দলের হাইকমান্ড। তাদের মতে, এতে যেমন দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে, তেমনি দ্বন্দ্ব আরও বাড়ছে আর তাতে সাধারণ মানুষ হচ্ছে বিভ্রান্ত। বিষয়টি আমলে নিয়ে এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বলেছেন, কারও কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে। গণমাধ্যমের সামনে এ নিয়ে কথা না বলতে সতর্ক করে দেন তিনি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দলের নিজেদের মধ্যে এত ঝগড়াবিবাদ কেন, ঘরের ভেতরে ঘর কেন?
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের বৈঠকেও। ওই বৈঠক থেকেও দলের পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার থেকে বিরত থাকার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ মাসে শুরু হতে যাওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরেও এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সফরের রিপোর্টের ভিত্ত্বিতে আশু করণীয় নির্ধারণ করা হবে। একেকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের নেতৃত্বে ১৫টি টিম দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি কোথায় কোথায় মনোনয়ন দ্বন্দ্ব চরমে, তা চিহ্নিত করবেন এবং নিরসনের চেষ্টাও চালাবেন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, দলের শীর্ষ নেতারা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরে গিয়ে দলকে গুছিয়ে আনার কাজ করবেন। তারা বিভিন্ন জনসভা-পথসভা এবং বর্ধিত সভা করবেন। সেখানে জনকল্যাণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরবেন। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ থাকলে তা নিরসন করবেন। মনোনয়ন নিয়ে কোথাও কোনো ধরনের অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করবেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে না জড়াতে কঠোর নির্দেশ দেবেন। কেননা মনোনয়ন দেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড। আর তা হবে যার যার সাংগঠনিক অবস্থান, দলে ত্যাগ ও অবদান, জরিপ রিপোর্ট এবং সর্বোপরি যার জিতে আসার ক্ষমতা আছে- সেসব অবস্থা বিবেচনা করে। আমাদের দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী সবার উদ্দেশে তাই স্পষ্টতই বলেছেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। বিবাদে না জড়িয়ে দল ও দেশের জন্য কাজ করুন, দল মূল্যায়ন করবে। আমিও সে কথাটিই সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যৌথসভায় জেলা সভাপতি বেনজির আহমেদ এবং ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই আসনের সংসদ সদস্য এমএ মালেক একে-অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এমএ মালেক বলেন, তার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থিতার সময় বেনজির আহমেদ বিরোধিতা করেছেন। তার আরও অভিযোগ, বেনজির আহমেদের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ওই পদ পেতে হয়েছে তাকে। এর বিপরীতে বেনজির অভিযোগ করেন, মালেক এলকায় পরিবারের রাজত্ব কায়েম করেছেন, টাকা ছাড়া কাউকে চাকরি দেন না। ওই এলাকার নেতাকর্মীরা যুগান্তরকে জানান, ২০০৮ সালে ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বেনজির, যা ২০১৪ সালে ছিনিয়ে নেন মালেক। মূলত আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করেই দু’জনের মধ্যে এ বিরোধ।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে নাটোরের গুরুদাসপুরে। সেখানকার এমপি আবদুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করেন থানার সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ। এছাড়া ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা নিয়ে যখন দেশ উত্তাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ‘বিএনপিই এ হামলা করে নাটক সাজিয়েছে’ প্রমাণ করায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই ফেনী আওয়ামী লীগের নেতা আজহারুল হক ‘জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী এবং সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতাই খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালান’ বলে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সারা দেশে এভাবে অন্তত ১০ জন এমপির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিজ দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বগুড়া-৫ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হাবিবুর রহমানকে এবার ছেড়ে দিতে নারাজ জেলার সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মজনু। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে আছি। দলের দুঃসময়ে দলকে শক্তিশালী করার কাজ করেছি। আমি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করব না; কিন্তু আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। তার মতো অর্ধশতাধিক ত্যাগী নেতা এবার বিভিন্ন স্থানে বিনা প্রতিপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের চ্যালেঞ্জ জানাবেন।
অপরদিকে জোটের স্বার্থের জন্য নিজের আসন ছেড়ে অনেক নেতাও এবার মনোনয়নের জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন। এমন একজন হলেন, পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক এমপি মজাহারুল হক প্রধান। এখানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আসনটি আওয়ামী লীগের। জোটের কারণে গতবার ছাড় দিয়েছি। এবার নির্বাচনী জোট হলেও এ আসনে নির্বাচন করতে চাই। প্রয়োজনে আসন রদবদল করা হোক। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের আগে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় বলেছিলেন, যারা শক্তিশালী প্রার্থী, তাদের আসনগুলো আগামী নির্বাচনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখবেন। আশা করি, এবার জোট কিংবা একক নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পাব এবং নির্বাচন করব।
আবার একইভাবে দলের হাইকমান্ড থেকে ইঙ্গিত পেয়ে এলাকায় কাজ করতে গিয়ে অনেকেই বাধার মুখে পড়েছেন। এমন একজন হলেন এক প্রখ্যাত চিকিৎসক। সম্প্রতি তার কাক্সিক্ষত আসনে তিনি অন্তত তিনবার দলীয় কর্মকাণ্ড চালাতে যান এবং প্রতিবারই স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন।
দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধ নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সারা দেশে নির্বাচনী গ্রাউন্ড ওয়ার্ক অনেক আগেই শুরু হয়েছে। কেন্দ্রও কিছু কাজ করছে। দলকে গুছিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতে কেন্দ্রীয় নেতারা এ মাসেই সফরে যাচ্ছেন। এসব সফরে প্রচারের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের মধ্যে কোথাও দূরত্ব-বিভেদ থাকলে তা নিরসনেও কাজ করা হবে। বিশেষ করে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থা জানার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আসনের দলীয় এমপিদের অহেতুক সমালোচনা করছেন। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দল এবং সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সফরকালে এ ব্যাপারে বার্তা দেবেন। বিভিন্ন কারণে অতীতে মনোনয়নবঞ্চিতদের সামনে মনোনয়নের দাবি নিয়ে তিনি বলেন, দলের জন্য ত্যাগ এবং অবদান কখনও বৃথা যায় না। দল অবশ্যই এসব ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করবে, মূল্যায়ন করবে।
প্রাপ্তির হিসাব কষছে বিএনপি ও শরিকরা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন প্রশ্নে বিএনপি ও জোটের শরিকরা এখন থেকেই প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব কষতে শুরু করেছে। মনোনয়ন লাভের আশায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। এক আসনে একাধিক প্রার্থী তাদের তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। আবারও কোনো কোনো আসনে অনেকে হাইকমান্ডের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে জোটের শরিকরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের মাঠে নামেননি। আসন পাওয়ার হিসাব কষতে শুরু করেছেন তারা। প্রত্যাশা মতো আসন পেতে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করছেন কেউ কেউ। দরকষাকষি করে শেষ পর্যন্ত কোন দল কতটা আসন বাগিয়ে নিতে পারে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে শরিকরা তাদের চাহিদার বিষয়টি বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অবহিত করছেন। শরিকদের কোন নেতা, কোন আসনে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, সে আগ্রহের কথাও জানাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি জোটের বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও আসন বণ্টনের বিষয়টি এখনও উঠেনি। তবে এ নিয়ে এ নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ চলছে। আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে দরকষাকষি করতে চান তারা।
বিএনপির হাইকমান্ড এখন থেকেই শরিকদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দল এবং জোটের পাশাপাশি নতুন দলকে নিয়ে নির্বাচনী জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী জোটে আনা দলগুলোকে কোন কোন আসন ছাড় দেয়া হবে, তা নিয়েও ভাবনায় আছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতা বদলে বিশ্বাসী আমরা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে কোনো সময় আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তৃণমূল ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা আছে, এমন নেতাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনপ্রিয়তা রয়েছে- এমন মাপকাঠি বিবেচনায় মনোনয়ন দেয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দীর্ঘদিন যারা দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন, জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রবীণ, তরুণ, বা মহিলা- যেই হোক, যোগ্যতা বিবেচনায়ই দেয়া হবে মনোনয়ন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতা বা টানাপোড়েন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আগামী নির্বাচনে আসন নিয়ে দ্বন্দ্বের চেয়ে জোটকে জয়ী করে বর্তমান সরকারের জুলুম-নির্যাতন থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করাই মূল টার্গেট। জোটের নেতারাও এ বিষয়টি উপলব্ধি করবেন বলে আশা করি।
সূত্র জানায়, বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন বিশেষ করে ২০০১ সালের মনোনয়ন তালিকা ধরেই সামনের নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। ৩০০ আসনেই তারা তালিকা করবে। তবে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হিমশিম খেতে হবে বিএনপির হাইকমান্ডকে। আগামী নির্বাচনে দল অংশ নিচ্ছে- নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন বিশ্বাস এবং আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও হাইকমান্ডের মনোভাব বুঝতে পেরে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন তারা। দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী এখন থেকেই তৎপরতা শুরু করেছেন। জড়িয়ে পড়ছেন গ্রুপিংয়ে। দীর্ঘদিন এলাকায় ছিলেন না, আন্দোলনে নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেননি- এমন নেতাও এখন বেশ কর্মীবান্ধব হয়ে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর ও সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রের ৭৭টি টিম তৃণমূল সফরে আছে। এ মাসের শুরু থেকেই তারা পর্যায়ক্রমে সারা দেশ সফর শুরু করেছেন। এসব সফরে প্রতিটি সংসদীয় আসনের বাস্তব চিত্র তারা তুলে আনছেন। বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে কার জনপ্রিয়তা কেমন, সে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছেন। সফর শেষে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন খালেদা জিয়ার কাছে জমা দেবেন তারা, যা আগামীতে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে।
এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। অনেককেই হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। সরাসরি মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি না বলে নিয়মিত এলাকায় থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে অনেকে নির্বাচনী কাজ শুরু করেছেন। নিয়মিত এলাকায় যাওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন আমাকে ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তার নির্দেশে আমি নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছি এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছি।
সূত্র জানায়, দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্তের পাশাপাশি জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়েও এখন থেকে ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে। কোন দল কোথায় এবং কয়টি আসন চাচ্ছে, তা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অবহিত করা হচ্ছে। শরিকরাও তাদের সম্ভাব্য আসনের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তা বিএনপির কাছে জমা দেয়া হবে। জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে জামায়াত ৫০টি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ২০টি, এলডিপি ১৭টি, কল্যাণ পার্টি ১২টি, জেপি (পার্থ) ৫টি, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) ১০টি, খেলাফত মজলিশ (একাংশ) ৮টি, লেবার পার্টি ৫টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৫টি, জাগপা ৫টি, এনপিপি ২টি, বাংলাদেশ ন্যাপ (ভাসানী) ২টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (একাংশ) ২টি, জমিয়ত ১০টি আসনে নির্বাচন করতে চায়। তবে বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে এবার বেশি ঝামেলয়া পড়তে হবে না। কারণ নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নেই। একই সঙ্গে দলটির শীর্ষনেতাদের বেশ কয়েকজনের ফাঁসি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, মূলত তাদের কারণেই মনোনয়ন ভাগাভাগিতে ঝামেলার সৃষ্টি হতো। এবার তা হবে না। এছাড়া জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় তাদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ কম থাকবে।
জানা গেছে, জামায়াতের আসন বলে পরিচিত অনেক এলাকায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। ফরিদপুর সদর আসন থেকে গতবার জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ। তার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় ওই আসনে দলটির শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু বলেন, ফরিদপুর সদর আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০০৮-এর নির্বাচনে জোটের শরিক জামায়াতকে এ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগামীতে বিএনপির প্রার্থীকেই মনোয়ন দেয়া হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় অনেকেই প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন না। বিগত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারপারসন আমাকে সদর উপজেলায় মনোনয়ন দিয়েছেন। আশা করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আমার প্রতি আস্থা রাখবেন। জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণপার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আগামী নির্বাচন জোটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতের চেয়ে জোটের লাভকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তিনি বলেন, আশা করি, আসনবিন্যাস নিয়ে জোটনেত্রী বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন। জোটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এক বা একাধিক আসনে যেখানে প্রয়োজন মনে করেন, সেখানে মনোনয়ন দেবেন। জোটে যাওয়ার সময় জোটনেত্রী তাকে বলেছেন, হাটহাজারির সন্তান হিসেবে এলাকার দিকে মনোযোগ দেন। তার আশ্বাসে এলাকায় নিয়মিত যাচ্ছি এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
নড়াইল-২ থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা জানিয়ে এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা জোটের প্রধান শরিক বিএনপির কাছে যৌক্তিক দাবিই জানাব। জোটনেত্রী আমাদের নিরাশ করবেন না।