শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন
নিউজ ঢাকা ডেস্কঃ- চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি দল এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে। জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের ওই দলটি ২৯ ও ৩০ এপ্রিল কক্সবাজারের একাধিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবে। প্রতিনিধি দলটির মিয়ানমার সফরেও যাওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা ইস্যূতে মিয়ানমার সফর করবে। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের মূল স্থান রাখাইন অঞ্চলে প্রতিনিধি দলটিকে পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গা নির্যাতনের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে সরাসরি জানা। বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং সামনের বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা কী হবে তা নিরুপন করা।
প্রতিনিধি দলটি পরিদর্শন শেষে ফিরে গিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে রেজ্যুলেশন পাস করার কথা রয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতাধর কয়েকটি রাষ্ট্রের কারণে তা সম্ভব হবে কিনা এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
জাতিসংঘের এই প্রতিনিধি দলটির সহ-নেতৃত্বে ব্রিটেনের একজন প্রতিনিধি থাকবেন বলে ব্রিটেনের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড গত ১৬ এপ্রিল দেশটির জাতীয় সংসদে জানান।
ব্রিটেনের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড গত ১৬ এপ্রিল দেশটির জাতীয় সংসদে বলেন, ‘চলমান রোহিঙ্গা বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। নিরাপদে এবং পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এই সঙ্কট সমাধানের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল এপ্রিলের শেষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করবেন।’
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে প্রতিনিধি দলটি নিজের চোখে রোহিঙ্গা সঙ্কট দেখে আসার পর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া সহজ হবে।’
ব্রিটেনের জাতীয় সংসদে এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক বলেন, আপনারা জানেন যে ব্রিটেন অনেক আগেই বলেছে যে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটেছে। এখন এই ঘটনার পূঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত করতে হবে, জাতিগত নিধন বা গণহত্যার পরিমাণ নিরুপন করতে হবে, যাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, যাই হোক, গণহত্যার বিষয়টি আদালতের বিষয়, এটা কোনো রাজনীতিক বা অন্য কেউ বললে হবে না। কিন্তু মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম সনদে স্বাক্ষর করেনি। তাই মিয়ানমারকে নিজের থেকেই আইসিসি’র দারস্থ হওয়া উচিত অথবা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমারকে আইসিসি’তে পাঠানো।’
ব্রিটেন অনেক আগেই মিয়ানমারকে আইসিসি’র দারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল বলে উল্লেখ করে মার্ক ফিল্ড বলেন, এই অমানবিক অপরাধের বিচার যাতে আইসিসি’তে হয় এজন্য ব্রিটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যতোবার প্রয়োজন এই বিষয়ে কথা বলবে। ব্রিটেন এই ঘটনার সুচিবার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না। একজন প্রসিকিউটর এই বিষয়ে আইসিসির কাছে সুবিচার চেয়ে আবেদন করেছে। আইসিসি এই বিষয়ে কী বলে তা দেখার জন্য প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আইসিসি যদি মনে করে যে রাখাইনে বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে এবং এই বিষয়ে সংস্থাটির সহায়তা প্রয়োজন, তবে ব্রিটেন আইসিসিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
গত বছরের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। মানবিক কারনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে কক্সবাজারসহ দেশের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।