শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
৩৫০০ পিস ইয়াবাসহ দুই ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে আটক করেছে র‍্যাব ১০ কেরানীগঞ্জে শিক্ষা খাতে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করল উইজডম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঢাকা জেলা দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লা সাধারণ সম্পাদক নিরব। রাজধানীর পুরান ঢাকার সৈয়দ হাসান আলী লেন ব্যবসায়ী সমিতির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত। কেরানীগঞ্জে শাক্তা বড় মসজিদের পাশে রাস্তা থেকে শামীম আজাদ(৫০) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার। ওল্ড ঢাকা ৯৫ এর আয়োজনে পিঠা উৎসব ও হাস পাটি অনুষ্ঠিত। কেরানীগঞ্জে দৈনিক জনবাণীর সম্পাদক ও প্রকাশকের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত এড,মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে তরুণ আইনজীবীদের ফুলেল শুভেচছা রাজধানীতে ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পুরান ঢাকায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকারকে ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতার।

কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকারকে ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামী গ্রেফতার।

কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা মোঃ ইমরান হোসেন ইমু।

গত ২৮/১১/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার দিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন সাবান ফ্যাক্টরী রোডের পাশে গাড়ার মধ্যে একজন মহিলার শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি মোবাইল টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় জনগনের সহায়তায় অগ্নিদগ্ধ মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারী হাসপাতাল ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করে।

অগ্নিদগ্ধ মহিলার সাথে কথা বলতে গিয়ে জানা যায় তিনি একজন বাক প্রতিবন্ধি। তখন দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের মাধ্যমে বাক প্রতিবন্ধি নারীর ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় সনাক্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ঐ রাতেই ভিকটিম লতা সরকারের কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন কলাতিয়ায় অবস্থিত তার পরিবারকে উক্ত ঘটনার সংবাদ দেয়। ভিকটিম লতার ভাইয়েরা জানায় যে, ঘটনার দিন সন্ধা হতে লতা নিখোঁজ ছিল। পরবর্তীতে ভিকটিম লতা বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইং ২৯/১১/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় মৃত্যুবরন করে। লতার মৃত্যুর পর তার ভাই স্বপন সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা নং- ১১৯, তাং- ২৯/১১/২০২২ , ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ৭/৪(১) তৎসহ ৩৭৯ পেনাল কোড রুজু করেন।

তদন্তঃ চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা জেলা মহোদয় সার্বক্ষণিক তদারকি ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করে। ভিকটিম লতার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক থাকায় পুলিশ কর্তব্যরত ডাক্তার ও একজন সাইন ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্ট এর সহায়তায় বাক প্রতিবন্ধি লতার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহন করে। তারপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। পরবর্তীতে ভিকটিম লতার ডায়িং ডিক্লারেশন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ০২/১১/২২ তারিখ ভোর বেলায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী সুজন মিয়া (২৫), পিতা- মোঃ দাদন মিয়া, সাং- কোদালপুর, উত্তর খান পাড়া, গোসাইরহাট, জেলা- শরিয়তপুর-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডিসিষ্ট লতার সাথে সুজনের ০৮/১০ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার দিন বিকেল বেলায় সুজন বাড়ির গদির খাটে লতার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে যে, সে যদি লতাকে নিয়ে ভেগে না যায় তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে গাব গাছ তলায় অপেক্ষা করতে বলে। লতা চলে গেলে সুজন লতাকে দূরে কোন নির্জন জায়গায় নিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সুজন লতাকে নিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া সাবান ফ্যাক্টরী রাস্তার ব্রিজের পরে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সুজন লতাকে প্রথমে ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে নিচের খাঁদে ফেলে দেয়। তখন লতা চিৎঁকার করতে থাকলে সুজন লতার গলা চেপে ধরে সিমেন্টের পাথরের সাথে মাথায় ৩/৪ টা টাক দেয়। এতে লতা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সুজন মনে করে লতা মারা গেছে। তারপর মৃত লতাকে যেন পরে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য লতার ব্যাগের কাপড়-চোপড় তার শরীরের উপর রেখে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সুজন পালিয়ে যায়। পরে লতাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জেনে সুজন মোবাইল বন্ধ করে ঐ রাতেই শরীয়তপুর গোসাইরহাটের কোদালপুরে তার গ্রামের বাড়ীতে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে সুজন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার শ্বশুর বাড়ীতে পালিয়ে গিয়ে অবস্থান করে। মূলত ভিকটিম লতার সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই সুজন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে মর্মে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত © সংবাদ সবসময় - ২০২৩
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়ঃ Marshal Host